ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাকাত ক্যালকুলেটর

আপনি কি ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাকাত ক্যালকুলেটর খুজছেন তাহলে এখানে আপনার সম্পদ এবং দায় নির্ধারণ করে যাকাতের সঠিক হিসাব করুন সহজেই। আসলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কোনো যাকাত ক্যালকুলেটর নাই তাই আপানি আমাদের যাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে মাত্র কয়েক ক্লিকে জানতে পারবেন আপনার যাকাতের পরিমাণ। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী যাকাত প্রদান করতে নিচে দেওয়া তথ্যগুলো ভালো করে পড়ে নিন।

যাকাত ক্যালকুলেটর

সম্পদ

দায়

যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

যাকাত কি?

যাকাত হল ইসলামিক অভ্যাস এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদত, যা প্রতি মুসলিম নাবালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) ব্যক্তি উপর ফরজ। এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ, যা একজন মুসলিম তার ধনী হওয়ার পর গরিব, অসহায়, এবং সমাজের অন্যান্য নির্ধারিত খাতের জন্য প্রদান করে। যাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত, যার মাধ্যমে সম্পদের সমতা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের চেষ্টা করা হয়।

যাকাতের পরিমাণ সাধারণত সম্পদের ২.৫% (অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা থাকলে ২.৫ টাকা) হতে হয়। যাকাত যাদের জন্য ফরজ হয়, তারা বছরে একবার নির্ধারিত নিসাব পরিমাণ সম্পদ ধরে তার উপর যাকাত প্রদান করে।

যাকাত কেন দিতে হয়?

যাকাত দেওয়ার অনেক কারণ ও উদ্দেশ্য রয়েছে, যা ইসলামিক সমাজে মানুষের অধিকার, ন্যায় এবং সমতার প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হল:

১. আল্লাহর আদেশ মেনে চলা

ইসলামে যাকাত দেওয়া ফরজ এবং এটি আল্লাহর নির্দেশ। কুরআনে যাকাতের গুরুত্ব ও তা দেওয়ার নির্দেশ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

  • “তোমরা যাকাত প্রদান করো এবং নামাজ পড়ো…” (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত ৪৩)
    যাকাত প্রদানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, যা একটি বড় উদ্দেশ্য।
২. গরিবদের সহায়তা করা

যাকাত মূলত গরিবদের জন্য। এটি অসহায় মানুষের জীবনমান উন্নত করার একটি উপায়। যাকাতের মাধ্যমে দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের সাহায্য করা হয়, যাতে তারা মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে।

৩. সমাজে আর্থিক সমতা আনা

যাকাত সম্পদে সমতা আনার জন্য সাহায্য করে। ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক ব্যবধান কমানো সম্ভব হয়, যাতে সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং অস্থিরতা ও অশান্তি কমে আসে।

৪. আত্মশুদ্ধি ও ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি

যাকাত এক ধরনের আত্মশুদ্ধি। এটি ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে সম্পদের প্রতি নির্ভরতা কমায়, একে অন্যের প্রতি সহানুভূতির অনুভূতি তৈরি করে এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ঈমানি শক্তি বৃদ্ধি পায়।

৫. আল্লাহর পথে বিনিয়োগ

যাকাত শুধুমাত্র গরিবদের জন্য নয়, বরং এটি আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হয়। এটি আল্লাহর পথে শুদ্ধতার প্রতীক, যা মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে পালন করতে হয়।

৬. মনের পরিশুদ্ধি ও অহংকার দূর করা

যাকাত দিয়ে মুসলিমরা তাদের অট্টালিকা ও সম্পদ থেকে কিছুটা ত্যাগ করে নিজেদের মনকে পরিশুদ্ধ করে। এটি তাদের অহংকার ও দুনিয়াবী সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা কমাতে সাহায্য করে।

৭. অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রমে সহায়তা

যাকাতের মাধ্যমে আরও অনেক সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে সাহায্য করা যায়, যেমন শিক্ষার উন্নয়ন, হাসপাতাল ও মসজিদ নির্মাণ, ইসলামিক প্রচার, ইত্যাদি। যাকাতের মাধ্যমে এসব কার্যক্রমের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়।

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। যাকাত ফরজ হতে হলে ব্যক্তির উপর নিম্নলিখিত শর্তগুলো প্রযোজ্য:

১. ইসলাম

যাকাত শুধুমাত্র মুসলিমদের জন্য ফরজ। একটি মুসলিম ব্যক্তি যাকাত দিতে বাধ্য, অমুসলিমদের উপর যাকাত ফরজ নয়।

২. পূর্ণ বয়স্ক এবং মানসিক সুস্থতা

যাকাত ফরজ হতে হলে ব্যক্তির পূর্ণ বয়স্ক (প্রাপ্তবয়স্ক) হতে হবে এবং তার মানসিক অবস্থা সুস্থ থাকতে হবে। মানসিকভাবে অস্বাস্থ্যকর বা শিশুদের উপর যাকাত ফরজ নয়।

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা

এক বছর (হিজরি বছর) পূর্ণ হতে হবে এবং সম্পদের পরিমাণ নিসাব পরিমাণ হতে হবে। নিসাব হল এমন একটি পরিমাণ সম্পদ, যা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার সমমূল্য। যদি কারো কাছে এই পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।

৪. এক বছর পূর্ণ হওয়া (হাওলান হাল)

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ব্যক্তির কাছে যে সম্পদ রয়েছে, সেটিতে এক হিজরি বছর (প্রায় ৩৫৪ দিন) পূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ, তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর ধরে থাকতে হবে।

৫. নিজস্ব সম্পদ থাকা

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ব্যক্তির সম্পদ হতে হবে তার নিজের। যদি সে সম্পদ অন্য কারও হস্তগত হয়ে যায় (যেমন ঋণের কারণে বা অন্য কোনও কারণে), তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না যতক্ষণ না সম্পদটি তার কাছে ফিরে আসে।

৬. জীবিকা নির্বাহের জন্য মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ

ব্যক্তির কাছে মৌলিক জীবনযাত্রার চাহিদা (যেমন বাড়ি, পোশাক, খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসা) পূর্ণ হওয়ার পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকতে হবে, যা নিসাব পরিমাণে পৌছাতে হবে। মৌলিক চাহিদার জন্য ব্যবহৃত সম্পদের উপর যাকাত ফরজ নয়।

৭. ঋণগ্রস্ত না হওয়া

যদি কোনো ব্যক্তির উপর ঋণ থাকে এবং সে ঋণ তার সম্পদকে গ্রাস করে, তবে যাকাত ফরজ হওয়ার আগে তার ঋণ পরিশোধ করা উচিত। যদি ঋণ পরিশোধে সম্পদ কমে যায় এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে না, তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না।

ইসলামে যাকাত বণ্টনের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে ৮টি নির্ধারিত খাত উল্লেখ করেছেন। এগুলো সুরা আত-তওবা (৯:৬০)-এ স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। নিচে হাদিস এবং কুরআনের রেফারেন্সসহ ৮টি খাতের বিবরণ দেওয়া হলো:

১. ফকির (অত্যন্ত দরিদ্র)

যারা মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ নেই।
রেফারেন্স:

  • “সাদাকা তো কেবল ফকিরদের জন্য…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)
  • রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ফকির হল সেই ব্যক্তি, যার কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ নেই এবং যাকে কেউ সাহায্য করে না।” (সহিহ বোখারি: ১৪০০)

২. মিসকিন (অভাবগ্রস্ত)

মিসকিনরা ফকিরদের চেয়েও বেশি অসহায়। তারা অনেক সময় সাহায্যের আবেদন করতে পারে না এবং তাদের অবস্থাও খুব করুণ।
রেফারেন্স:

  • “মিসকিনদের জন্য…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)
  • রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মিসকিন সে, যে চাহিদার কথা বলার মতো অবস্থায় নেই, অথচ সে সাহায্যের প্রকৃত হকদার।” (সহিহ বোখারি: ১৪২০)

৩. যাকাত সংগ্রহকারীরা

যারা যাকাত সংগ্রহ এবং বিতরণের কাজে নিয়োজিত থাকে, তাদের বেতন বা খরচ যাকাত থেকে দেওয়া যায়।
রেফারেন্স:

  • “এবং যারা যাকাত সংগ্রহ করে…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)

৪. যারা ইসলামে নতুন (মুয়াল্লাফাতুল কুলুব)

যারা নতুন মুসলিম বা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তাদের মন শক্তিশালী করতে যাকাত দেওয়া হয়।
রেফারেন্স:

  • “যাদের মন জয় করতে হয়…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)
  • রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কিছু নতুন মুসলিমকে যাকাত দিয়েছিলেন তাদের ঈমান মজবুত করার জন্য। (সহিহ মুসলিম: ১০৫৮)

৫. দাসমুক্তির জন্য (রিকাব)

যেসব দাস মুক্তি পেতে চায় বা যারা ঋণ করে নিজেদের মুক্ত করতে চায়, তাদের সাহায্যের জন্য যাকাত দেওয়া হয়।
রেফারেন্স:

  • “এবং দাসমুক্তির জন্য…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)

৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি (গারিমীন)

যারা বৈধ কাজে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন এবং তা পরিশোধে অক্ষম, তাদের ঋণমুক্ত করতে যাকাত দেওয়া হয়।
রেফারেন্স:

  • “ঋণগ্রস্তদের জন্য…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)
  • রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যদি তার ঋণ বৈধ কাজে হয়ে থাকে, তবে তাকে যাকাত থেকে সাহায্য করা উচিত।” (সুনান আবু দাউদ: ১৬২১)

৭. আল্লাহর পথে (ফি সাবিলিল্লাহ)

যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে, ইসলাম প্রচার করে বা অন্য কোনও বৈধ ইসলামী কাজে লিপ্ত থাকে, তাদের জন্য যাকাত ব্যয় করা যায়।
রেফারেন্স:

  • “আল্লাহর পথে…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)
  • রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যাকাত আল্লাহর পথে ব্যয় করা উত্তম।” (সহিহ বোখারি: ১৪৫২)

৮. অসহায় মুসাফির (ইবনে সাবিল)

যারা ভ্রমণে সম্পদহীন হয়ে পড়েছে এবং তাদের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য প্রয়োজন।
রেফারেন্স:

  • “এবং অসহায় মুসাফির…” (সুরা আত-তওবা, আয়াত ৬০)

যাকাতের নিসাব কিভাবে নির্ধারণ করতে হয়?

যাকাতের জন্য নিসাব হল এমন একটি নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ, যার উপর যাকাত ফরজ হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর (হিজরি বছর) ধরে থাকা উচিত। নিসাবের পরিমাণ মূলত সোনার বা রূপার মাপে নির্ধারণ করা হয় এবং এটি সোনার ও রূপার বর্তমান বাজারমূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। সাধারণত, সোনার নিসাব ৭.৫ তোলা (অর্থাৎ ৯০ গ্রাম) এবং রূপার নিসাব ৫২.৫ তোলা (অর্থাৎ ৬৩০ গ্রাম) হিসাব করা হয়।

নিচে বিস্তারিতভাবে যাকাতের নিসাব নির্ধারণের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:


১. সোনার নিসাব (৭.৫ তোলা / ৯০ গ্রাম)

যদি আপনার কাছে সোনার ৭.৫ তোলা (৯০ গ্রাম) বা এর সমপরিমাণ মূল্য থাকে, তবে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি সোনার মূল্য ১ গ্রাম = ৫০০ টাকা থাকে, তাহলে ৯০ গ্রাম সোনার মূল্য হবে:

  • ৯০ গ্রাম × ৫০০ টাকা = ৪৫,০০০ টাকা।
    অর্থাৎ, আপনার সোনার সম্পদ যদি ৪৫,০০০ টাকার সমপরিমাণ থাকে, তবে আপনি যাকাত দিবেন।

২. রূপার নিসাব (৫২.৫ তোলা / ৬৩০ গ্রাম)

রূপার নিসাবের পরিমাণ ৫২.৫ তোলা (৬৩০ গ্রাম) এবং এর মূল্যও বর্তমান বাজারমূল্যের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, যদি রূপার মূল্য ১ গ্রাম = ১০ টাকা হয়, তাহলে ৬৩০ গ্রাম রূপার মূল্য হবে:

  • ৬৩০ গ্রাম × ১০ টাকা = ৬,৩০০ টাকা।
    এক্ষেত্রে, যদি আপনার কাছে রূপার সম্পদ ৬,৩০০ টাকার সমপরিমাণ থাকে, তবে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে।

৩. অন্যান্য সম্পদের নিসাব

যাকাত শুধু সোনা ও রূপার উপর নির্ভর করে না, বরং ব্যবসায়িক পণ্য, টাকা, ব্যাংক ব্যালেন্স, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার ইত্যাদির উপরও যাকাত নির্ধারণ করা যায়। এসব সম্পদে যাকাতের নিসাব একইভাবে সোনার বা রূপার সমমূল্যে নির্ধারণ করা হয়।

উদাহরণ:

  • যদি আপনার ব্যাংকে ৫০,০০০ টাকা থাকে এবং সোনার মূল্য অনুযায়ী আপনার সম্পদ ৪৫,০০০ টাকার সমপরিমাণ হয়, তবে এই টাকাতেও যাকাত ফরজ হবে।

৪. নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর এক বছর পূর্ণ হওয়া

যাকাতের জন্য শুধুমাত্র নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা যথেষ্ট নয়। ওই সম্পদে এক হিজরি বছর (৩৫৪ দিন) পূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ, যদি আপনার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তবে সে সম্পদে এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত ফরজ হবে।


৫. যদি নিসাবের পরিমাণ কম থাকে

যদি আপনার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তবে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে না। তবে যদি বছর শেষে আপনার সম্পদ নিসাব পরিমাণে পৌঁছায়, তাহলে এক বছর পর আপনি যাকাত দিবেন।


৬. ঋণ ও প্রয়োজনীয় খরচের প্রভাব

যাকাতের হিসাব করার সময় আপনার যেসব ঋণ বা মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অর্থ ব্যয় করা হবে, সেগুলো বাদ দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যদি আপনার ঋণ বা মৌলিক প্রয়োজন (যেমন, বাড়ি, খাবার, চিকিৎসা) থাকে, তবে সেগুলোর খরচ বাদ দিয়ে যাকাতের জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ হিসাব করা হয়।

যাকাত ইসলামিক শরিয়তের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি শুধু একটি আর্থিক দায়িত্ব নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে যাকাতের গুরুত্ব বারবার উল্লেখিত হয়েছে, এবং ইসলামী সমাজের জন্য এটি একটি পবিত্র ইবাদত। যাকাতের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার পাশাপাশি সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

১. আল্লাহর নির্দেশনা

যাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে পরিগণিত এবং এটি আল্লাহর একটি স্পষ্ট নির্দেশনা। কুরআনে বহু স্থানে যাকাতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

  • “এবং সালাত (নামাজ) প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত দাও। (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ৪৩)

এটি দেখায় যে যাকাত নামাজের সাথে সম্পর্কিত, এবং একজন মুসলিমের উপর আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অংশ হিসেবে এটি ফরজ।

২. গরিবদের সাহায্য ও দান

যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো গরিব, অসহায় এবং সমাজের অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সাহায্য করা। যাকাত গরিবদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করার জন্য অর্থ প্রদান করা হয়। যাকাতের মাধ্যমে সমাজে দরিদ্রদের জন্য দান-খয়রাতের ব্যবস্থা করা হয়, যা সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

৩. সমাজে অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠা

যাকাত সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে সহায়তা করে। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক ব্যবধান কমে যায় এবং সমাজে সমতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। যাকাত দিয়ে সমাজের দরিদ্র, এতিম, বিধবা ও অসুস্থ মানুষদের সহায়তা প্রদান করা হয়, যাতে তারা মৌলিক চাহিদাগুলি পূর্ণ করতে পারে।

৪. আত্মশুদ্ধি ও ঈমানের শক্তি

যাকাত শুধু গরিবদের সাহায্য করার মাধ্যমে সমাজে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে না, বরং এটি ব্যক্তির আত্মশুদ্ধি এবং ঈমানের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। যাকাত দিয়ে মানুষ সম্পদের প্রতি তার নির্ভরশীলতা কমায় এবং আল্লাহর পথে নিজের সম্পদকে উৎসর্গ করে। এটি ব্যক্তির মনকে পরিশুদ্ধ করে এবং অহংকার ও দুনিয়াবী সম্পদের প্রতি আসক্তি কমায়।

৫. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ

যাকাত একটি ইবাদত, এবং এর মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। যখন একজন মুসলিম তার সম্পদের একটি অংশ গরিবদের দেয়, তখন সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হয়। যাকাত দ্বারা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা অর্জিত হয় এবং তার পাপ মাফ হতে পারে।

৬. আর্থিক দায়িত্ববোধ ও সামাজিক সচেতনতা

যাকাত মুসলিমদের মধ্যে আর্থিক দায়িত্ববোধ তৈরি করে। এটি তাদেরকে সামাজিকভাবে সচেতন এবং পরোপকারী হতে সহায়তা করে। যাকাত দিয়ে একজন মুসলিম বুঝতে পারে যে তার সম্পদ আল্লাহর দান এবং সে তার সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যয় করতে দায়িত্বশীল। এটি সমাজে পরস্পরের সহায়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।

৭. পরকালের পুরস্কার

যাকাত শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য নয়, বরং এটি পরকালেও পুরস্কৃত হওয়ার একটি মাধ্যম। যাকাত দেওয়া মুসলিমদের জন্য একটি পুণ্যের কাজ, এবং এর মাধ্যমে তারা পরকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত হবে। হাদিসে এসেছে:

  • যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান করে, তার সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং তার উপকারিতা আসে। (সহীহ মুসলিম)

এটি পরিস্কার করে যে, যাকাত আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছানোর একটি মাধ্যম এবং এটি পরকালে সফলতা এনে দিতে পারে।

আমাদের অন্যান্য ক্যালকুলেটর টুলস